শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

ফেনীর ছেলের অন্যরকম নজির

বিশেষ প্রতিনিধি->>
‘রাস্তায় এ টাকাটা আজ পাওয়া গেছে মহিলার ব্যাগে। এক লক্ষ টাকা। সাথে কিছু কাগজপত্র। কি কাগজপত্র সঠিকভাবে বলতে পারলে টাকা ফেরত  দেয়া হবে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এভাবেই টাকার ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ব্যাগের মালিকের সন্ধান করছিলেন আতাউল হক। পোস্টে দেয়া ফোন নম্বরে কল এসেছে অনেক। কোনো কোনো কলদাতা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই মানসিকতার জন্য। তবে অধিকাংশ কলদাতা ব্যাগটি নিজের জানিয়ে তা নিতে চান। কিন্তু ব্যাগে কি কি আছে এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য না দিতে পারায় তারা কেউ প্রকৃত মালিক না বলেই নিশ্চিত হন আতাউল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃত মালিকের হাতে পৌঁছেছে এক লাখ টাকাসহ ওই ব্যাগটি। তিনি একজন সাবেক বিমানবালা। ব্যাগটি পেয়ে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই তার। ঘটনার শুরু গত সোমবার রাতে। নিজের প্রাইভেট কারটি চালিয়ে খিদমাহ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন আতাউল। সময় তখন রাত সোয়া ১১টা। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে হঠাৎ দৃষ্টি থেমে যায়। রাস্তায় খয়েরি রঙের একটি ব্যাগ পড়ে আছে। কিন্তু ব্যাগের ওপর দৃষ্টি বেশিক্ষণ আটকে থাকেনি। তার জন্য খিদমাহ হাসপাতাল এলাকায় অপেক্ষায় আছেন একজন। সেখানে পৌঁছে কাজ শেষে আবার ফেরার পালা। ততক্ষণে গাড়িটি হস্তান্তর হয়েছে স্ত্রীর নিকট। তাই রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। ফ্লাইওভারের ওখানে আসতেই ব্যাগটির কথা মনে পড়ে। ব্যাগটি ততক্ষণে আছে কি-না,  এ নিয়েও বেশ সংশয়ে ছিলেন। রিকশা থেকে নেমে এগিয়ে যান। হ্যাঁ ব্যাগ আছে। দূর থেকে মনে হচ্ছিলো আবছা আলো-আঁধারে চকচক করছে। ব্যাগটি হাতে নিয়ে ল্যাম্প পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে খুলতেই অবাক হন। একটা টাকার বান্ডিল। পিন আটকানো সিল মারা আছে- এক হাজার গুণ, এক শ’। মানে এক লাখ টাকা। ব্যাগের মধ্যে আরো কিছু কাগজ, ভিজিটিং কার্ড, ওষুধ। ভিজিটিং কার্ডটি ঢাকা ব্যাংকের এক পুরুষ এমডি’র। ব্যাগটি নিয়ে বাসায় যান। ফ্লাইওভারের পাশেই ১/২৭ নম্বর বাসা আতাউল হকের। বাসায় পৌঁছে রাত ১১টা ২০ মিনিটে ব্যাগের মালিকের সন্ধানে একটি পোস্ট দেন। বিপুল সাড়া পান। কিন্তু প্রকৃত মালিক পান না। পরদিন কর্মঘণ্টা শুরুর পরপরই কল দেন ভিজিটিং কার্ডের ফোন নম্বরে। ঢাকা ব্যাংকের এমডি তা রিসিভ করেন। বিষয়টি জানানোর পর তিনি বলেন, কার ব্যাগ বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
সোমবার ঢাকা ব্যাংকের পুরান ঢাকার ইমামগঞ্জ শাখা থেকে এক লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন শিরিন শারমিন নামে এক নারী। ওই এমডির তৎপরতায় খবর পান তিনি। আধা ঘণ্টা পরেই আতাউল হকের ফোনে একটি কল। নাম শিরিন শারমিন। সাবেক বিমানবালা। নিজের পরিচয় দিয়ে জানান, তার ব্যাগটি হারিয়েছে। বর্ণনা দেন ব্যাগের ভেতরে চায়নার আমন্ত্রণপত্র, হৃদরোগের ওষুধ ও একটি ভিজিটিং কার্ড ছিল। কিভাবে হারিয়ে যায় সেই বর্ণনাও দেন তিনি। বাবার বাসা যাত্রাবাড়ী থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় ফিরছিলেন বাইকে করে। বাইকে চালক সঙ্গীসহ সন্তানও ছিল। সঙ্গে ছিল কয়েক ব্যাগ। শীত লাগছিলো শিরিন শারমিনের। তাই চাদর জড়ানো ছিল। এরমধ্যে ব্যাগটি কখন পড়ে গেছে তা টের পাননি তিনি।  বর্ণনা শুনে পুরোপুরি বিশ্বাস হয় আতাউল হকের। ব্যাগটি নিয়ে যেতে বলেন তিনি। প্রাণ ফিরে পান যেন শিরিন শারমিন। জরুরি প্রয়োজনে উত্তোলন করা টাকা হারিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। ব্যাগটি নেন। কিন্তু আতাউল হকের সঙ্গে দেখা হয়নি। বাসার পাশে বাসাবোর একটি দোকানে ব্যাগটি রেখে তিনি তখন অফিসে। ওই দোকান থেকেই নিজের পরিচয় দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে যান শিরিন শারমিন। তারপর ‘এই ঘুণে ধরা সমাজে আপনার মতো ভালো মানুষ পাওয়া খুব কঠিন’ এরকম নানান বাক্য আতাউলকে শুনিয়ে ফোনে অশেষ কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ জানান তিনি। এছাড়াও এই মহৎ কাজের জন্য আতাউল হককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপুল মানুষ। সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন শিরিন শারমিন।
ফেনী জেলার সোনাগাজীর সাতবাড়িয়া মতিগঞ্জের আতাউল হক, স্ত্রী জুবাইদা আক্তার ও এক কন্যা সন্তান ফারনাজ আরিহাকে নিয়ে থাকেন বাসাবোতে। আতাউল হক একজন আমদানি-রপ্তানিকারক। এছাড়াও মাটি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। উদ্যোক্তা তৈরি ও তাদের সহযোগিতা করাই এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ। আতাউল হক জানান, মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে স্বস্তি, শান্তি পান তিনি। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন