জন্মযুদ্ধ ৭১। অাজ ৭ ডিসেম্ব ২০১৪
১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় নোয়াখালী জেলা।
৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত দিবস। মুক্তিসেনারা এইদিন জেলা শহরের পিটিআই’তে রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে উড়িয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। এই বিশেষ দিনে নোয়াখালী মুক্ত মঞ্চে নেই কোন আনুষ্ঠানিকতা ও মুক্তমঞ্চের ভাস্কর্যের নেই কোন পরিচর্যা। ভাস্কর্য ধুলোবালিতে ভরে গেছে। ২৫ মার্চের পর মুক্তিযোদ্ধারা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরপর প্রতি পদে পদে বাঁধা পেয়ে বহুকষ্টে পাকিস্তানী সেনারা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী দখল করে নেয়। দখলদার বাহিনী জেলা শহরের শ্রীপুর, সদরের রামহরিতালুক, বেগমগঞ্জের কুরিপাড়া, গোপালপুর ও আমিশ্যাপাড়ায় নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এ সময় হায়নাদাররা গুলি ও পুড়িয়ে হত্যা করে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে। এরপর দেশের অভ্যন্তরে ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার অস্ত্র হাতে মাঠে নামে মুক্তিযোদ্ধারা। কোম্পনীগঞ্জের বামনী, তালমাহমুদের হাট, ১২ নং স্লুইস গেইট, সদরের ওদারহাট, করমবক্স, বেগমগঞ্জের ফেনাকাটা পুল, রাজগঞ্জ, বগাদিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। নোয়াখালীকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি যখন প্রায় চুড়ান্ত, ঠিক তখনই ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানী মিলিটারিরা ও মিলিশিয়ারা। এ সময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তি বাহিনীর হামলায় অসংখ্য মিলিটারি সদস্য ও মিলিশিয়া নিহত হয়। মুক্ত দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মোহাম্মদ শাহজাহান, মোঃ মোস্তফা কামাল, মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, ৭ ডিসেম্বর ভোররাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীকে শত্রুমুক্ত করার চুড়ান্ত অপারেশন শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে আমারা সকল মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে চতুর্দিক থেকে আক্রমন চালিয়ে বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুলের রাজাকার ক্যাম্প মুক্ত করি। একই দিন জেলা শহরের মাইজদি কোর্ট ষ্টেশন, জিলা স্কুল, দত্তেরহাট নাহার মঞ্জিল মুক্ত করে অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারপর পাকআর্মি ও রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি মাইজদি পিটিআই সকাল ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্তান টের পেয়ে পিটিআই ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানরত রাজাকাররা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে পার্শ্ববর্তী সরকারি আবাসিক এলাকার এক ব্যক্তি মারা যান। পাল্টা গুলি চালায় মুক্তিযোদ্ধারাও। গুলির শব্দে কেঁপে উঠে পুরো শহর। সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে রাজাকাররা। বিপরীত দিক থেকে গুলি বন্ধ হলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখতে পান সেখানে ১০-১২ জন রাজাকারের লাশ পড়ে আছে। আরো কয়েকজন রাজাকার ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এভাবে ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় নোয়াখালী জেলা । তবে স্বাধীনতার ৪২ বছরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর , গনকবর গুলি আজও সংরক্ষিত হয়নি । বিশেষ করে মাইজদি পিটিআই হানাদারদের ক্যাম্পে অত্যাচার ও গুলি করে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতাকামীদের হত্যার পর জেনারেল হাসপাতালের পিছনে গর্ত করে পুতে পেলত, তাদের কবরগুলি সংরক্ষিত হয়নি। এই বিশেষ দিনে নোয়াখালী মুক্ত মঞ্চে নেই কোন আনুষ্ঠানিকতা ও মুক্তমঞ্চের ভাস্কর্যের নেই কোন পরিচর্যা। ভাস্কর্য ধুলোবালিতে ভরে গেছে। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন