মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬

তুরস্কে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির চেষ্টা ও রুশ-তুর্কী সম্পর্কের ভবিষ্যৎ! আবু সালেহ ইয়াহিয়া


তুরস্কে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারলভ গতকাল (১৯.১২.২০১৬) এক দু:খজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে নিহত হয়েছেন। রাজধানী আনকারায় এক প্রোগ্রামে বক্তব্যকালে ষ্টেজে দন্ডায়মান অবস্থায় দায়িত্বপালনরত পুলিশ কর্মকর্তা মেভলুত মেরত আলতিনতাশ কর্তৃক মুহুর্মুহু গুলির মুখে তিনি নিচে লুটিয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনা এমন সময় ঘটানো হয়েছে যখন অল্প সময়ের ব্যবধানে সিরিয়া যুদ্ধের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের মাঝে এক তৃপক্ষীয় বৈঠক হবার কথা। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পূর্বেই রাশিয়া ও তুরস্কের বর্তমান সম্পর্কে বড় ধরণের ফাটল সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এ ধরণের মর্মান্তিক ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা।
এদিকে ঘটনার পরপরই তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেওলুত চাবুশভলো টেলিফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ’র সাথে। এমন বিয়োগাত্মক ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মস্কোতে আয়োজিক এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘এ হামলার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও এদের পৃষ্টপোষকদের সমস্ত পরিকল্পনাকে আমরা নস্যাত করে দেব’। এ সময় তিনি এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। আজ দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর যৌথ প্রেসব্রিফিং করার কথা রয়েছে। এদিকে আজ ( ২০ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায়) রাশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল আনকারা এসে পৌছার কথা রয়েছে ইতোমধ্যে।

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে রুশ-তুর্কী সম্পর্ক ?

বর্তমানে রাশিয়া ও তুরস্কের সম্পর্কটা বেশ জটিল পর্যায়ে রয়েছে। এ দুটি দেশের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্ককে কখনো উষ্ঞ আবার কখনো খুব শীতল মনে হয়। সিরিয়ায় যুদ্ধরত রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমান তুরস্কের বিমানবাহীনি কর্তৃক ফেলে দেবার পর দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে। তার ৮/৯ মাস পর ১৫ জুলাই রাতে এক ব্যর্থ সেনা ক্যু’র মাধ্যমে তুরস্ক সরকারকে ফেলে দেবার চেষ্টা করা হলে এবং সে চেষ্টায় পরোক্ষভাবে আরেক পরাশক্তি আমেরিকার হাত থাকার বিষয়টি পরিস্কার হবার প্রেক্ষিতে নিজেদের ভাঙা সম্পর্ক জোড়া দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেন দু’দেশের কর্তাব্যক্তিরা। আরকেটু পরিস্কারভাবে বললে, রাশিয়া তুরস্ককে আমেরিকার বলয় থেকে বের করে নিজের গ্রিপে ঢোকানোর জন্য সব ধরণের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তুরস্কের প্রতি। ফলে আমেরিকার সাথে একটু একটু করে দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্টতাও বাড়তে থাকে সমানতালে। কিন্তু দু’দেশের এ সম্পর্ক দৃঢ়তর হবার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাড়ায় সিরিয়া যুদ্ধ। সিরিয়াতে রাশিয়া ইরানের সাথে মিলেমিশে বাশার আল আসাদকে টিকিয়ে রাখতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে থাকলেও তুরস্কের অবস্থান ঠিক তার উল্টো। তুরস্ক বরাবরই সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে কথা বলে আসছে। তবে তারা স্বৈরাচারী (তাদের ভাষায়) আসাদকে বাদ দিয়েই চায় এ সমাধান। এ দাবীতে তুরস্ক একদিকে কথা বলে আসছে সিরিয়ায় যুদ্ধরত আরেক মোড়ল আমেরিকাসহ সকল পক্ষের সাথে, অপরদিকে বাশারবিরোধী ‘মুক্তিকামী জনতা’ বা বিদ্রোহী শক্তিকে সহযোগিতা করে আসছে নিয়মিত। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তুরস্ক তার দাবিতে দুই মোড়লের সাড়া না পেয়ে  এবং ১৫ জুলাই এক মোড়লের কালো থাবা তাদের প্রতি প্রসারিত হবার পর জনগণের দেশপ্রেম ও অসাধারণ আত্মত্যাগের ফলে তা প্রতিহত করতে পেরে কিছুটা মনোবল নিয়েই সিরিয়া যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে বসে তুরস্ক। তুরস্কের সীমানা ঘেষে ফোরাত নদীর ওপারে জিরাবলুস দখল করে নেয় অল্প দিনেই। আইএসআইএস ও তুরস্কের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ‘পিকেকে’ এর সমর্থক ‘ওয়াইপিজি’কে তাড়িয়ে দিয়ে জিরাবলুসসহ আশেপাশের বেশ কিছুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এখন সিরিয়ার বিদ্রোহী ও তুরস্ক বাহিনীর হাতে। বাশার আল আসাদ তুরস্কের এমন পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা জানালেও রাশিয়া এ ব্যাপারে তেমন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এমন প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে সিরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেপ্পো রাশিয়া, ইরান ও বাশার বাহীনির যৌথ হামলার পর বিদ্রোহীদের হাতছাড়া হলে গুরুত্বপূর্ণ দিকে মোড় নেয় সিরিয়া পরিস্থিতি। এ অবস্থায় বাশারপন্থী কিংবা বাশার বিরোধীপন্থী কারোর পক্ষেই যুদ্ধ, রক্তপাত ও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া আপাতত সামগ্রিক বিজয়ের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতে আমেরিকাকে বাদ দিয়েই সিরিয়া সংকটের একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান খোজতেই রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের মাঝে আয়োজিত এক তৃপক্ষীয় বৈঠকের আগেই গতকাল বলির পাঠা বানিয়ে হত্যা করা হলো তুরস্কে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও অভিজ্ঞ কুটনীতিক আন্দ্রে কারলভকে।
ফলে সিরিয়া ইস্যুতে এক বিন্দুতে আসতে না পারা দুই দেশের সম্পর্কের মাঝে গভীর ফাটল সৃষ্টিই এ হত্যার উদ্দেশ্য বলে মনে করছে দু’দেশই। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন হত্যাকান্ড রুশ-তুর্কীর ক্রমবর্ধমাণ সম্পর্কের মাঝে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে? হত্যাকান্ডের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দেয়া দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে দু’দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন কোন আভাস এখনো পাওয়া যায়নি। উভয় দেশই মনে করছে, তাদের ‘কমন শত্রু’ দ্বারাই এ হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে সিরিয়ার সংকটকে আরো দীর্ঘায়িত করা। অন্তত তুরস্ক রাশিয়াকে এটা বুঝাতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে আপাত দৃষ্টিতে তুরস্ককে এ যাত্রায় রাশিয়া কর্তৃক বড় ধরণের কোন চাপে পড়তে হচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত হত্যার ঘটনায় বিদ্যমান সম্পর্কে চিড় ধরুক আর না করুক, সিরিয়া ইস্যুতে এক বিন্দুতে আসতে পারা কিংবা না পারার মাঝেই মূলত নির্ভর করছে দু’দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের পারদ উঠা নামার বিষয়টি।

ইরান ও তুরস্কের দূরত্ব আরো বাড়ছে?

ইরান ও তুরস্কের মাঝে নিকট অতীতে সম্পর্কের উষ্ঞতা পরিলক্ষিত না হলেও ১৫ জুলায়ের পর থেকে তুরস্কের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইরানের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। ঐ রাতে একটুও ঘুমাননি বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন ইরানের রাষ্ট্রপতি হাসান রোহানী। তার কিছুদিন পরেই আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হওয়া রাশিয়া, ইরান ও আজারাবাইজানের মাঝে তৃপক্ষীয় বৈঠকে তুরস্ককে আমন্ত্রণ জানাতে রাশিয়ার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে বসে ইরান। তবে পরবর্তীতে সে বৈঠকে তুরস্ককে দাওয়াত কিংবা অংশ গ্রহণের কোন খবর  আর পাওয়া যায়নি। এদিকে সাম্প্রতিক আলেপ্পো হামলায় ইরান সরাসরি জড়িত থাকার ফলে তুরস্কের জনগণের মাঝ ইরানের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে থাকে ব্যাপকভাবে। এমনকি আংকারা ও ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ইরানের দূতবাসের সামনে প্রতিবাদেরও আয়োজন করে কয়েকটি সংগঠন। এতে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাধা না দেয়ায় এমনকি প্রতিবাদের ব্যাপারে ইরান দূতাবাসকে পুলিশের পক্ষ থেকে আগে থেকে কোন খবর প্রদান না করায় সংক্ষুব্দ হয় ইরান। পরের দিন তেহরানস্থ তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রালয়ে তলব করে জানিয়ে দেয়া হয় তাদের সংক্ষুব্দ হবার কথা। ইরানের রাষ্ট্রপতি রুহানীর প্রধান সহকারী ইসহাক জিহানগীরের তুরস্কে পুর্ব নির্ধারিত এক সফরও বাতিল করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের মিডয়াগুলো।

তুরস্কে কি গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে ?

তুরস্কের বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্যে প্রায়ই শুনা যায়, তুরস্কে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা করছে একটি বৃহৎ শক্তি। এ শক্তি বলতে তারা যে আমেরিকাকেই বুঝাচ্ছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এমনকি এ ব্যাপারে জনগণের মাঝেও রয়েছে পরিস্কার ধারণা। তাদের মতে, ১৫ জুলাই রাতে ব্যর্থ হবার পর নানা উপায়ে তুরস্কের মাঝে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত ‘পিকেকে’ নামক গোষ্টিটিকে। তাদেরকে অস্ত্র, ট্রেনিং ও অর্থ সবকিছুরই যোগান দেয়া হচ্ছে নিয়মিত।
১০ ডিসেম্বর ইস্তাম্বুলের এক ষ্টেডিয়ামে খেলা চলাকালীন বাহিরে নিপত্তায় থাকা পুলিশ বহরের উপর গাড়ী বোমা চালানো হয়। এতে প্রাণহানি ঘটে ৩৮ জনের। গুরতর আহত হন ১৫০ জনেরও বেশী। এই শোক কাটতে কাটতেই ১৭ ডিসেম্বর কায়সারিতে সেনাবাহীনিকে পরিবহনকারী বাসকে উদ্দেশ্য করে বোমা হামলা চালানো হলে সাথে সাথে নিহত হন ১৩ জন সৈন্য। আহত হন আরো অনেকে। তার ঠিক দুদিন পরই ১৯ ডিসেম্বর হত্যা করা হলো তুরস্কে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে। আগের দুটি হামলার সাথে পিকেকে জড়িত বলে সরকার থেকে বলা হলেও রাশিয়ার রাষ্ট্রদুত হত্যার ব্যাপারে গোয়েন্দাবাহীনির ইঙ্গিত মি. ফেতুল্লাহ গুলেনপন্থীদের দিকে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তা মেভলুত মেরত আলতিনতাশ গুলেনপন্থী পলাতক এক কর্মকর্তার বাসাতেই থাকতেন। ১৫ জুলায়ের পর তাকে চিহিৃত করতে না পারার ফলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া যায়নি।
এই হত্যাকান্ডের সাথে যেই জড়িত থাকুক, মাত্র ১০ দিনের মাথায় ঘটে যাওয়া তিনটি হামলাই হচ্ছে বড়ধরণের ঘটনা। একটি পুলিশের উপর, আরেকটি সেনাবাহীনির উপর আর অপরটি চালানো হয়েছে এক পরাশক্তি দেশের  রাষ্টুদূতের উপর। এ তিনটি ঘটনাকে এক সাথে রেখে চিন্তা করলে এবং ঘটনাগুলোর মাঝে পরস্পরের যোগসাজস ও এর সফল বাস্তবায়নের বিষয়টিকে সামনে রাখলে এটা পরিস্কার হয় যে, তুরস্ককে এক অন্ধকার গলিপথের দিকে দ্রুত বেগে ধাবিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত একটি বিশেষ গোষ্টি। যার কোন কূলকিনারা খোঁজে পাচ্ছেন না দেশটির গোয়েন্দারা।
পিকেকে’তো আছেই, তার সাথে যুক্ত হয়েছে ১৫ জুলাই বিদ্রোহের সাথে জড়িত পলাতক সেনাবাহীনির কয়েকশত সদস্যসহ বিভিন্ন বাহীনি ও সেক্টরের দায়িত্ব থেকে অপসারিত ও ক্ষুব্দ একটি মহল। তাদেরকে বাহির থেকে মদদ দিচ্ছে তারাই, যারা ১৫ জুলাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িত। পুরাতন সম্পর্ক ও পরাশক্তি হবার কারণে তুরস্ক সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে দেশটির নাম না নিলেও জনগণের মুখে মুখে রয়েছে সেই নামটি। সর্বশেষ তুরস্কের বারবার অনুরোধ ও চাহিদামত সব ধরণের ডকুমেন্ট হস্তান্তরের পরও মি. গুলেনকে তুরস্কের হাতে ফিরিয়ে দেবার কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হওয়ায় আমেরিকার ব্যাপারে অনেকটাই হতাশ তুরস্ক সরকার ও জনগণ। যার ফলে এখন দেশটিতে যত হামলাই হচ্ছে তার সাথে কোন না কোনভাবে এ শক্তিটিই জড়িত রয়েছে বলে সরকার ও জনগণের বিশ্বাস। তাদের মতে, ১৫ জুলাইতে তো তারা তুরস্কের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ফেলে দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তথাপি সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্ক ও রাশিয়া ঐক্যমতে পৌছোতে পারলে এ অঞ্চল থেকে লেজ গুটিয়ে পালানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা আমেরিকার। কারণ সিরিয়াতে আইএস এর বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া তাদের একটি বাহানা মাত্র। তুরস্ক ও রাশিয়া এক থাকলে এই অঞ্চলকে আইএস মুক্তকরা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কি ভাবছে তুরস্কের জনগণ?

চারদিকে হতাশার এমন ঘনঘটার মাঝেও তুরস্কের জন্য আশার দিক হলো, তুরস্কের ভিতরে চলমান ঘটনাগুলোর সাথে কারা জড়িত, কি তাদের উদ্দেশ্য এ ব্যাপারে রাশিয়ার ধারণা অত্যন্ত পরিস্কার। ফলে রাশিয়া হুট করে মাথা গরম করে কিছু একটা করে বসবে বলে এখনো মনে করছে না তুরস্ক ও সরকার ও তার জনগণ। তবে তুরস্ক সরকারের জন্য এর চেয়েও বড় আশার দিক হচ্ছে দেশটির দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামী জনগণ। জনগণ ধরেই নিয়েছে, আমাদের ভিতরে বাইরে সবদিকে শুধু দুশমন আর দুশমন। সরকারে যেই থাকুক, দুশমনরা তুরস্ককে ইরাক, আফগান ও সিরিয়ার মত না বানানো কিংবা তা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ না হওয়া পর্যন্ত তারা হাল ছেড়ে দেবেনা। কাজেই প্রতিদিন কোন বোমাহামলার শব্দ শুনে ঘুম ভাঙা কিংবা ঘুম থেকে উঠেই কোন মায়ের সন্তান হারানোর আর্তচিৎকার শ্রবণ করাই তাদের এখনকার নিয়তি। প্রতিরাতে টেলিভেশনের পর্দায় কোন না কোন শহরে শহীদদের জানাযার খবর কিংবা হৃদয় বিদারক বিদায় সমাবেশের সংবাদ শুনে ঘুমুতে যাওয়াই তাদের জীবনের নৈমত্তিক ঘটনা। কাজেই কোথাও কোন হামলা বা প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে কোন টার্কিশের সাথে আলোচনা করতে চাইলে বলে, ‘বশভের কারদেশিম, বু বুতপরাক ইচিন নরমাল বিরশেই’। মানে ‘বাদ দেন  ভাই, এসব এই মাটি (দেশ)র জন্য স্বাভাবিক বিষয়’।
অত্যন্ত দেশপ্রেমিক এই তুর্কী জনগণের জন্য কতদিন এসব ঘটনা ‘নরমাল বিরশেই’ হিসেবে থাকে তাই এখন দেখার বিষয়।
২০.১২.২০১৬

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন