দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা
মু.আতাউর রহমান:
উনবিংশ শতাব্দী থেকে মূলত দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন প্রকট আকার ধারন করেছে যা বর্তমান একবিংশ শতাব্দী তে এসে আরো তীব্রতর হয়ে গেছে। যেভাবে চলছে আমার ধারনা এ শতাব্দী পুরোটাই মুসলিমরা নির্যাতিত হতে থাকবে এবং আশা করছি আগামী শতাব্দী হবে মুসলমানদের বিশ্ব। এখন মূল কথায় আসি, মুসলমান সমাজ কেন নির্যাতিত তা সবারই কিছুটা ধারনা আছে। তাই ঐ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। বলছি নির্যাতিত মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নির্বিকার ভূমিকা নিয়ে। আদতে মুসলিম নির্যাতনের ক্ষেত্রে সব ধর্মের অনুসারীরা একট্টা। এক্ষেত্রে ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু ধর্মালম্বী সবারই এক অভূতপূর্ন ঐক্য রয়েছে। কিন্তু বিশ্বের প্রায় ৫৮টি মুসলিম রাষ্ট্র এখানে ওদের থেকে সম্পূর্নই ব্যাতিক্রম অবস্হানে রয়েছে। মুসলিম বিশ্বে যারা পরাক্রমশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত তাদের পরষ্পরের মাঝে কথিত শিয়া-সুন্নি বিভেধ, আদর্শগত বিভেধ, উদ্দেশ্যগত বিভেদ এবং কোন না কোনভাবে পশ্চিমা মোড়লদের দাসত্বপনাকে আমি অনেকাংশেই দায়ী করছি। এ জন্য তারা স্বজাতীর ভাইদের নির্যাতন দেখেও দেখে না।
মুসলিম বিশ্বের নির্বিকার ভূমিকার প্রথমে উল্লেখ করেছিলাম শিয়া-সুন্নী বিবাদের কথা। দেখুন বর্তমান মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মাঝে পরাক্রমশালী একটি রাষ্ট্র ইরান যা মুসলিম বিশ্বে একমাত্র শিয়া রাষ্ট্র। যাদের সামরিক সক্ষমতা প্রশ্নাতীত কিন্তু তারা এখনো পর্যন্ত কট্টর সুন্নি সম্প্রদায় বিরোধী। কোথাও সুন্নি মুসলমান নির্যাতিত হলে তাদের নূন্যতম বিবৃতি পর্যন্ত থাকে না। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। কারন ফিলিস্তিন ভৌগলিকভাবে তাদের প্রতিবেশী তাই নিজেদের সুরক্ষার খাতিরে এবং উভয়ের একই শত্রু ইসরাইলকে তটস্হ রাখতেই ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে ইরানিদের এই প্রয়াস। পাশাপাশি দেখুন সিরায়ায় আসাদ শিয়া অনুসারী হওয়ায় তার পক্ষে অবস্হান নিয়ে সেখানে সিরিয়ান সুন্নী মুসলিম নিধনেও একটা পত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে ইরান। শিয়া-সুন্নী বিরোধের জেরে মুসলিম বিশ্বে ঐক্যের ক্ষেত্রে এক বিশাল দেয়াল হয়ে দাডিয়েছে এবং তারই ভাল ফায়দা তুলছে মুসলিম বিদ্বেষীরা। হয়ত আমার ইরান নিয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে অনেক ইরান ভক্তের প্রশ্ন জাগতে পারে। আশা করি পরবর্তী পর্বে উত্তর পাবেন।
শিয়া-সুন্নী বিরোধের সুযোগ কে কাজে লাগিয়েই ইরাক-ইরান যুদ্ধ সংঘঠিত করাতে পেরেছিল পশ্চিমারা। বর্তমানে এই বিস্তর ফারাক কে দেখে পশ্চিমা ও তাদের মিত্ররা দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতনের সাহস পায়। দ্বিতীয়ত বলেছিলাম, আদর্শগত প্রার্থক্যের কথা ৫৮ টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ ঠিকই কিন্তু এর মাঝে সম্পূর্ন ইসলামী ভাবাপন্ন শাসকের সংখ্যা একেবারে নেই বললে চলে। এই রাষ্ট্রগুলোর কেউ পুজিবাদে বিশ্বাসি, কেউ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, কেউ রাজতন্ত্রের ধারক, কেউ বা আবার পশ্চিম যে দিকে তারাও সেদিকে। উদহারন স্বরুপ দেখুন, মুসলিম বিশ্বের প্রানকেন্দ্র সৌদি আরবের রাজতন্ত্র এবং পশ্চিমা দাসত্বপনার বিষয়টি।
এতগুলো আদর্শিক ফারাক যখন থাকে তখন স্বভাবতই প্রকৃত আদর্শ ইসলাম নিয়ে কতটুকু ঐক্য আর ভ্রাতৃত্ব থাকবে তা সহজে অনুমেয়! কিন্তু আপনি এর বিপরীতে দেখুন সকল অমুসলিম রাষ্ট্রগুলো যতই আদর্শিক ফারাক থাক না কেন, মৌলিক জায়গায় তারা এক। নিপিড়করা যখন এক আর নিপিড়িতরা বিভাজিত তখন স্বাভাবিকভাবেই নিপিড়িতরা আরো নিপিড়নের স্বীকার হবে। একথা আপনি বিশেষজ্ঞ না হয়েই বলতে পারেন।
এই লেখার প্রথম পর্বে চারটি কারন উল্লেখ করেছিলাম। তন্মধ্যে দুইটির কিছুটা ব্যাখ্যা ইতোপূর্বে দেয়ার চেষ্টা করেছি। এবার আসি তৃতীয় কারন,উদ্দেশ্যগত পার্থক্য। এ ক্ষেত্রে বলতে গেলে আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি পৃথিবীর একটি মুসলিম রাষ্ট্রেরও বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের সদিচ্ছা মূলক কোন উদ্দেশ্য নেই। দেখা যায় কোন রাষ্ট্র কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদ বা সাহায্যের হাত বাড়ালেও তার অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকে কূটনোতিক আরেকটি উদ্দেশ্য। কিছু রাষ্ট্র নিজের স্বার্থে ইসলামী মূল্যবোধ কে বিকিয়ে দিয়ে পশ্চিমের সাথে নিজেদের অংশিদারিত্বের জন্য দাসত্বপনাকে উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহন করেছে। আবার কিছু রাষ্ট্রপ্রধান (বিশেষত রাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে) নিজেদের রাজ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দেশের সার্বভৌমত্বের দোহাই দিয়ে প্রজা সকল কে “ইত্তেহাদুল মুসলিম” বিমুখ করেই চলেছেন। এভাবে প্রায় ৫৮টি মুসলিম রাষ্ট্রই বিবিধ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কারোরই “ইত্তেহাদুল মুসলিম” গঠন করার নূন্যতম উদ্দশ্য আমার ক্ষুদে দৃষ্টিতে আসছে না!
এ ক্ষেত্রে আবার নখদন্তকহীন OIC র কথা আর কিই বলবো? তার নখ এবং দাত দুইটাই পশ্চিমের লাগানো তাই পশ্চিম যখন যেভাবে চাইবে তখন তাকে সেভাবে ব্যবহৃত হতে হবে। আমি প্রভাশালী মুসলিম দেশগুলোর চুড়ান্ত সমস্যা হিসেবে বলেছিলাম প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পশ্চিমের দাসত্বপনাকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন