ইস্তাম্বুলে আবারো বোমা হামলা ও তুরস্কের ভবিষ্যত
গতকাল আবারো ভয়াবহ বোমা হামলায় কেঁপে উঠে ইস্তাম্বুল। এতে ২৯ জন শহীদ ও ১৬৬ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সয়লু। স্মরণ কালের বড় হামলাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ১৫ জুলাইয়ের ( সেনা ক্যু চেষ্টা) আঘাত শুকাতে না শুকাতে একের পর এক রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে তুরস্কের মাটি। এ দিকে দেশটি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে আছে সিরিয়ার আইএস ও বাশার পন্থীদের বিরুদ্ধে। দেশের ভিতরেও চলছে পিকেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অশেষ এক যুদ্ধ, যার শেষ কোথায় জানেনা দেশটির কোন রাজনৈতিক দলই। গতকালের এ হামলা তারই ধারাবাহিকতা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সন্দেহ নেই, পিকেকে'র শক্তির ভান্ডার হলো দেশের বাইরে। একটি উন্নত মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে যারা তুরস্কের এগিয়ে যাওয়া বা টিকে থাকা পছন্দ করেনা, তারাই পোষন করছে তুরস্কের বিষফোঁড়া এই পিকেকে'কে। এরা ঘাটি গেড়েছে তুরস্কের অভ্যন্তরে, সীমানা ঘেসে সিরিয়া ও ইরাকে।
এ দিকে ১৫ জুলাইয়ের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবার পর এখন তুরস্কের বিরুদ্ধে চলছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। আমেরিকা লিরার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। গত এক মাসে ডলারের বিপরীতে লিরার মুল্য পতন হয়ে ২.৯০ থেকে ৩.৫০ এ গিয়ে দাড়িয়েছে।
আমারিকার সাথে সম্পর্ক খারাপ হলেও ইসরাঈলের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির একটা প্রকাশ্য তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা নিয়ে দেশের ভিতরে নিজ দল, বিরোধী দল, ইসলামী দল এবং সাধারণ মানুষের একাংশের মাঝে তুমুল বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া থাকলেও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনায় আঁশটেপিষ্টে জড়িয়ে থাকায় তুরস্ক আপাতত মুসলমানদের জানের দুশমন ইসরাঈলের সাথে কোন ঝামেলায় যেতে রাজি নয়। তাইতো আগের চুক্তি অনুযায়ী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে করা 'মাভি মারমারার' মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে তুরস্ক। যদিও এ ঘটনায় শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ হলো দেশটি নিজে। মামলাটি প্রত্যাহারের পর দেশের ভিতরে সরকারের আচরণ নিয়ে যখন ধীরে ধীরে স্নো পড়তে থাকা তুরস্কের ঠান্ডা আবহাওয়া আরো বেশী শীতল হতে শুরু করেছিল, ঠিক এমন সময়ে ইস্তাম্বুলের গতকালের এই ভয়ানক প্রাণঘাতি হামলা যেন গরম করে দিল তুরস্কের আবহাওয়া। এক হামলায় ঝরে গেল ২৯ টি তরতাজা প্রাণ। ১৬৬ টি জন মারাত্মক আহত হলেন। আরো অনেক প্রাণ হয়তো হারিয়ে যাবে আহতদের মধ্য থেকে। শুধু তারা জানতে পারবেনা কি তাদের অপরাধ!! আর এর শেষইবা কোথায়??
এ দিকে মাভি মারমারার মামলা ডিসমিশের ফলে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে অনেকেই বলছেন, "তুরস্ক যখন এ মামলাটি ডিসমিশের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের শরীর কেটে ইসরাঈলকে উপহার দিয়েছে, ঠিক তখন ইস্তাম্বুলের বোমা হামলা ঘটিয়ে তার উচিত প্রতিদান (?) দিয়েছে ইসরাঈল। কারণ ইসরাঈল বা আমেরিকা যার বন্ধু হয় তার নাকি শত্রুর দরকার হয় না।"
সবদিক মিলিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জটিল এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে তুরস্ক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন