সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০২০

চায়নাতে লকডাউনের অভিজ্ঞতা বর্ননা করছেন ফেনীর ছেলে সিয়াম উন মোরসালিন

চায়নার ইছাং এ আমি লকডাউন এ কিভাবে ভালো ছিলাম এ নিয়ে আপনাদেরকে কিছু কথা শেয়ার করবো।

 এখন আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আর মুক্ত আছি।তাই ভাবলাম সবাইকে বলি কিভাবে কাটিয়েছি লক-ডাউন এর দিনগুলো?

১। আলহামদুলিল্লাহ নামাজ আদায়করে, কোরআন পড়ে আর  এসতেগফার করে আল্লাহর কাছে এই বিপদের মুক্তি চেয়েছি।
২। ইছাং লক-ডাউন হবার পর থেকে হোস্টেলের বাহিরের কারো সাথে আর দেখা হয়নি এবং জানুয়ারি-মার্চ মাস পুরো সময় একবারের জন্য হোস্টেলের বাইরে যাইনি।প্রথম দিকে দেশে ফেরার ইচ্ছা থাকলেও বেকায়দায় পড়ে আর ফিরতে পারিনি।
৩। প্রচুর পরিমানে কুসুম গরম পানি,আদা গরম চা, কমলা,মাল্টা,গরম পানি পানকরেছি।
 ৪। দিনে যতবার মনে হয়েছে এমন কিছু ধরেছি যাতে জীবাণু থাকতে পারে ততবার হাত মুখ ধুয়ে নিয়েছি।
৫। খুব খারাপ টেম্পারেচারেও আমার ঠান্ডা লাগেনি আলহামদুলিল্লাহ।
৬। রুমের বাহিরে গেলে মাস্ক ব্যাবহার করা মাস্ট।
৭।প্রথম দিকে ভাইরাসের ভয়াবহতায় মন খুব খারাপ হলেও তা মানিয়ে নিয়েছি, মনকে ভালো রাখার জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি,বন্ধুদের সাথে ভিডিও চ্যাট হয়েছে।
৮। মাইনাস তাপমাত্রাতেও প্রতিদিন গোসল করে পরিচ্ছন্ন থেকেছি, ৫ বারের বেশি অজু করেছি।
৯।বাইরে থেকে কিনে আনা(আমাদের কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ডে ইউনিভার্সিটির লোকেরাই অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে খাওয়ার সরবরাহ করেছেন) ফল,সবজি,ডিম এমন কি কৌটার কিছু আনলেও সাবান পানি(লিকুইড)  দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়েছি।
১০।স্বাভাবিক বাতাস আসার জন্য দিনে ৩ঘন্টা জানালা খোলা রেখে বাকি সময় বন্ধ রাখতে হয়েছে,সাধারণত মাইনাস তাপমাত্রার কারনে দরজা,জানালা বন্ধই রাখতে হয়।
১১।মাছ খাওয়া হয়নি পুরো সময়ে কারন সরবরাহ বন্ধ ছিল, মাংস কম খেয়েছি তবে যা খেয়েছি অবশ্যই অনেক বেশি সিদ্ধ করে খেয়েছি।
১২।প্রচন্ড আতংক আর মন খারাপের মধ্যেও গ্রেজুয়েশনের টাস্ক নিয়ে কিছুটা সময় দিয়েছি।
১৩।রুম ক্লিন রেখেছি সাথে পোশাক আশাকও।
১৪।প্রতিদিন রুমে শরীরের তাপমাত্রা চেক করেছি থার্মোমিটার দিয়ে তা আবার দায়িত্বশীল শিক্ষককে জানিয়েছি।
১৫।যেহেতু চায়নাতে ম্যাক্সিমাম লেনদেন অনলাইনে হয় তাই ক্যাশ টাকা ব্যবহার করিনি।আর অর্ডারের পর বাজার আসলে তা আনতে নিচে যাওয়ার সময় মাস্ক পরেছি।
১৬।ছাদে(রোদ উঠলে)গিয়ে হাটাহাটি করেছি,রুমেও কিছু সময় ব্যায়াম করেছি।
১৭।ছাদে গেলে আরো দুই একজন বন্ধুর দেখা পাওয়া যেত,তাদের থেকে নিরাপদ দুরত্বে বজায় রেখে মাঝে মাঝে আড্ডা দিয়েছি।
১৮।প্রতিবারই বাসায় ফিরে পোশাক পরিবর্তন করেছি।
১৯।সাধ্যের মধ্যে প্রিয় খাওয়ার গুলো খেয়েছি এটি মন ভালো রাখার খুব কার্যকরি উপায়।
২০।সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের এবং পুরো মানবজাতির কল্যাণে মাফ চেয়েছি।

যেহেতু বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা এবং ব্যবস্থা চায়নার মত নয় সেহেতু আমার মতামতঃ
১।মাস্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করবো।
২।দয়া করে কেউ অতিরিক্ত মাস্ক,স্যানিটাইজার,চাল,ডাল,তেল কিনে অন্যের সাথে জুলুম করবোনা, আমাদের সবার সম্মিলিত ভাবে ভালো থাকতে হবে।
৩।দয়া করে কেউ অতিরিক্ত প্যানিক হবো না এবং অন্যেদের মাঝে হতাশা ছড়াবো না।
৪।মুমিনের জন্য আল্লাহর সাহায্য নিশ্চিত,তাই বলে নিজেরা সচেতন না হয়ে এই ভেবে বসে থাকা যাবেনা যে আল্লাহ শুধু আমাদেরই বাঁচাবেন।যে জাতি নিজেরা নিজেদের সহায়তা করেনা,আল্লাহ ও তাদের সহায়তা করেন না।
৫।এটি একটি মহামারী, তাই মহামারীতে সরকার,ডাক্তার আর সেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর দেয়া নিয়ম কানুন ফলো করতে হবে।
৬।প্রতিবেশীদের খোঁজ খবর রাখবো।
৭।এসময় শুধু করোনা ভাইরাসই নয় বরং মৌসুমি সর্দী কাশিও হতে পারে।
৮।যারা কোয়ারেন্টাইনে বা হাসপাতালে থাকছি তারা তা নিজের এবং দেশের কল্যাণেই করছি ভেবে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া,ব্যবস্থাপনাকে গালি দেয়া,ডাক্তারদের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকবো।
৯।রোগের উপসর্গ দেখা দিলে প্যানিক না হয়ে ডাক্তারে সাথে যোগাযোগ করতে হবে,এবং পরিবার বর্গ নিয়ে সেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন বা হাসপাতালে যাওয়ার জন্য মনস্থির করতে হবে।
১০।সকল প্রকার সংঘরোধ করতে হবে।কোথাও গেদারিং করা যাবে না,নিজেদের প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ খেলাধুলা,বিয়ের অনুষ্ঠান,সভাসমাবেশ, চায়ের দোকানে আড্ডা এসব বন্ধ রাখবো।
১১।সেচ্ছাসেবী সংঘঠনের মাধ্যমে বেশি বেশি মাস্ক ,স্যানেটাইজার , খাদ্য দ্রব্য বিতরন করতে হবে।
১১।সকল প্রকার ডোনেশন কর্মসূচিতেও যেমন(মাস্ক বিতরণ,স্যানেটাইজার বিতরণ, খাদ্য দ্রব্য বিতরনের সময় রাস্তায় মানুষ জড়ো না করে বরং ঘরে ঘরে গিয়ে নিদিষ্ট দুরত্ব অবলম্বন করে তা দিতে হবে।
১২।সকল শ্রেণির মানুষকে মানুষের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এগিয়ে আসলেই এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করলেই ভয়কে জয় করা সম্ভব।
১৩।সর্বোপরি আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে,সংশ্লিষ্ট যারা কাজ করছেন তাদেরকে রোগ নিরাময়ে সহযোগিতা করতে হবে।

সিয়াম উন মোরসালিন
বি.এস.সি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড আর্কিটেকচার
চায়না থ্রি গরজেস ইউনিভার্সিটি
ইছাং,হুবেই,চায়না।
তার ফেইসবুক আইডি থেকে হুবুহু কপি করা হয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন